হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইমাম বাকির (আ)-এর পুরো নাম ছিল মুহাম্মাদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন। তিনি ৫৭ হিজরিতে (৬৭৭ খ্রিষ্টাব্দে),রজব মাসের ১ তারিখে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন চতুর্থ ইমাম, ইমাম জাইনুল আবেদিন (আ), এবং তার মা ছিলেন ফাতিমা বিনতে হাসান, ইমাম হাসান (আ)-এর কন্যা। এভাবে, তিনি ইমাম হাসান (আ) এবং ইমাম হুসাইন (আ)-এর মাধ্যমে সরাসরি নবী মুহাম্মাদ (সা)-এর বংশধারার প্রতিনিধি।
ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আ) ইসলামের এমন এক মহান ইমাম, যাঁর জীবন ও শিক্ষা মানবতার জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর পবিত্র জীবন আমাদের দেখিয়ে দেয় কীভাবে আখলাক (নৈতিকতা) এবং দয়া (সদয় আচরণ) একজন মুমিনের ব্যক্তিত্বে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।
উপরোক্ত হাদিসে ইমাম (আ) বলেছেন:
شِيعَتُنَا يُعْرَفُونَ بِخِصَالِهِمُ: بِالسَّخَاءِ، وَالْوَرَعِ، وَإِقَامَةِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْبِرِّ بِالْوَالِدَيْنِ.
"আমাদের শিয়াদের চেনা যায় তাদের গুণাবলির মাধ্যমে: উদারতা, তাকওয়া, সালাত আদায়, যাকাত প্রদান, এবং পিতামাতার প্রতি সদয় আচরণ।"
(সূত্র: তাফসির ইমাম হাসান আসকারি, পৃষ্ঠা ৩১৩)
এই হাদিসের আলোকে ইমাম (আ)-এর জীবন থেকে আখলাক ও দয়ার শিক্ষা বিশ্লেষণ করা যাক।
১. উদারতা :
ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আ) নিজের জীবনে উদারতার এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তিনি নিজে দুঃস্থদের সাহায্য করতেন এবং তাদের প্রয়োজন পূরণে সদা তৎপর থাকতেন। উদারতা শুধুমাত্র দান-খয়রাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি অন্তর্ভুক্ত করে মানুষের প্রতি সুন্দর আচরণ ও সহমর্মিতা প্রদর্শন। ইমাম (আ) তাঁর অনুসারীদের উদার হতে বলেছেন যাতে সমাজে দয়া ও ভালবাসা ছড়িয়ে পড়ে।
২. তাকওয়া:
তাকওয়া মানে আল্লাহর প্রতি গভীর ভয় ও ভালোবাসার মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করা। ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আ) বলেছেন, "তাকওয়ার মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে।" তাঁর জীবনে প্রতিটি কাজ তাকওয়ার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়েছে। তিনি শিখিয়েছেন, সত্যিকারের শিয়া তারা-ই যারা আল্লাহর আনুগত্যে অটল থাকে এবং গুনাহ থেকে দূরে থাকে।
৩. সালাত আদায়:
ইমাম (আ) বলেন, সালাত এমন এক ইবাদত যা মুমিনের চরিত্র নির্মাণ করে এবং তাকওয়া বৃদ্ধি করে। তাঁর জীবন ছিল সালাতের প্রতি অগাধ মনোযোগের নিদর্শন। তিনি শিখিয়েছেন, সালাত শুধু ব্যক্তিগত ইবাদত নয়; এটি সমাজে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠার একটি মাধ্যম।
৪. যাকাত প্রদান:
ইমাম (আ) যাকাত প্রদানের গুরুত্ব বারবার উল্লেখ করেছেন। তিনি শিখিয়েছেন, ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে যাকাত এমন একটি সেতু যা সামাজিক বৈষম্য দূর করে। যাকাত প্রদান শুধু একটি আর্থিক দায়িত্ব নয়; এটি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ।
৫. পিতামাতার প্রতি সদয় আচরণ:
ইমাম (আ) পিতামাতার প্রতি সদয় আচরণকে ঈমানের এক প্রধান নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর শিয়াদের নির্দেশ দিয়েছেন, পিতামাতার প্রতি দয়া ও শ্রদ্ধা এমনভাবে প্রদর্শন করতে হবে যাতে তারা সন্তুষ্ট থাকেন এবং আল্লাহও সন্তুষ্ট হন।
ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আ)-এর জীবনের প্রভাব:
ইমাম বাকের (আ)-এর জীবন মানবতার জন্য এক মহৎ শিক্ষা। তাঁর নির্দেশনা শুধু ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য নয়, বরং একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনের জন্যও প্রয়োজনীয়। তিনি শিখিয়েছেন যে, প্রকৃত শিয়া হতে হলে আমাদের উচিত উদারতা, তাকওয়া, সালাত, যাকাত, এবং পিতামাতার প্রতি সদয় আচরণকে নিজেদের জীবনে প্রতিষ্ঠা করা।
উপসংহার:
ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আ) আমাদের শিখিয়েছেন যে, একজন প্রকৃত মুমিনের জীবন আখলাক ও দয়ার আদর্শ দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত। আমরা যদি তাঁর নির্দেশনাগুলো আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হতে পারব। তাঁর জীবন আমাদের জন্য এক উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা, যা প্রতিটি যুগে মানুষের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে।
আল্লাহ আমাদেরকে ইমাম বাকির (আ)-এর শিক্ষা ও উত্তম চরিত্র ( আখলাক) অনুসরণ করার তৌফিক দিন।
লেখক: মাওলানা কবির আলী তরফদার কুম্মি
আপনার কমেন্ট